ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে ঐতিহ্যবাহী ও ঐতিহাসিক চুয়াডাঙ্গা রেলস্টেশনটির মাধ্যমে ১৮৫৯ সালে চুয়াডাঙ্গা হতে কুষ্টিয়ার জগতি পর্যন্ত সর্বপ্রথম রেল যোগাযোগের কাজ শুরু হয়। ঠিক একই বছরে চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনের কাজও শুরু হয়।
১৬৪ বছরের দীর্ঘ সময় পাড়ি দেয়া চুয়াডাঙ্গার পুরাতন রেলওয়ে স্টেশনটি কালের সাক্ষী হিসেবে এতদিন ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন হিসেবে দাঁড়িয়েছিল। জরাজীর্ণ হয়ে পড়লেও এতদিন পুরাতন ভবনেই স্টেশনের সমস্ত কার্যক্রম পরিচালিত হতো। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর পুরাতন ভবনের আদলে নির্মিত হচ্ছে দ্বিতল বিশিষ্ট আধুনিক রেলওয়ে স্টেশন।
৫৪০ দিনের নির্ধারিত সময়ে স্টেশনটির নির্মাণ কাজের ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ কোটি ১৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা। দ্বিতলভবন বিশিষ্ট রেলওয়ে স্টেশনটির নির্মাণ কাজ চলমান আছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে বলা হয়েছে কাজের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সম্পন্ন হয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা একাজ সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন বলে জানিয়েছেন রেল কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ রেলওয়ে চুয়াডাঙ্গার সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী চাঁদ আহমেদ বলেন, চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনটি আজ অবধি চুয়াডাঙ্গা শহর ও পার্শ্ববর্তী মেহেরপুর এবং ঝিনাইদহ এলাকার লোকজনকে নিরবিচ্ছিন্ন পরিষেবা দিয়ে আসছে।
কিন্তুু পুরনো রেলওয়ে স্টেশনটি জরাজীর্ণ হওয়ায় বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ভবনটি ভেঙে একটি আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত দ্বিতল বিশিষ্ট স্টেশন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। তিনি আরো বলেন, এখানে দ্বিতল আধুনিক স্টেশন ভবন, প্ল্যাটফর্ম ও শেড পুনর্নির্মাণের প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। বর্তমানে একদিকে চলছে পাইলিং অপরদিকে রড বাধার কাজ। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমরা একাজ সম্পন্ন করতে পারব বলে আশা করছি।
ওই রেলওয়ে কর্মকর্তা জানান, ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আরটিসি -এস এইচজে জয়েন্ট ভেঞ্চার নতুন রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। গতবছর ১২ই সেপ্টেম্বর এই প্রকল্পটি বাংলাদেশ রেলওয়ে ও ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আরটিসি -এসএইচজে মধ্যে চুক্তিবদ্ধ হয়।
চুক্তিবদ্ধ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদকাল ধরা হয়েছে ৫৪০ দিন। এই প্রকল্পের অধীনে ১২ হাজার ৪৭০ বর্গফুট আয়তনের দ্বিতল বিশিষ্ট স্টেশনে ভবন নির্মাণ, যাত্রী সাধারণের নিরাপদ ও আরামদায়ক করার জন্য বর্তমান প্ল্যাটফর্মকে ১২ ফুট থেকে ২৫ ফুট প্রশস্তকরণ, স্টেশন ভবন সংলগ্ন প্ল্যাটফর্মের সেড আধুনিকায়ন ও স্টেশনের সামনের অংশের ছাদটিতে জনসাধারণের জন্য বিশাল পার্কিংয়ের সুবিধা রাখা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার রেল পাড়ার বাসিন্দা নাসির আহাদ জোয়ার্দ্দার বলেন, চুয়াডাঙ্গায় রেল স্টেশনটি অনেক পুরাতন। দীর্ঘদিন ধরে ভবনগুলো ব্যবহার হয়েছে। বর্তমান ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সরকার নতুন একটি স্টেশন নির্মাণ করছে। আশা করছি স্টেশনটি খুব দৃষ্টিনন্দন স্টেশন হবে। ইতোমধ্যে নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। বর্তমান সরকার দৃষ্টিনন্দন চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণ করায় আমরা অনেক খুশি।
চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কামরুজ্জামান চাঁদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে দেশের অনেক উন্নয়ন হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় চুয়াডাঙ্গায় নির্মাণ হচ্ছে নতুন দ্বিতল বিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন রেলওয়ে স্টেশন। এই স্টেশনে প্রায় প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ বার ট্রেন আপ-ডাউন করে। স্টেশনটি পরিপূর্ণ নির্মাণ হলে ট্রেনে চলাচলকারী যাত্রী সাধারণ অনেক উপকৃত হবেন। আগের স্টেশন ভবনটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলেছে।
চুয়াডাঙ্গা স্টেশন মাস্টার মিজানুর রহমান বলেন, ব্রিটিশ আমলে নির্মিত ঐতিহ্যবাহী চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনের সেই পথ ধরে আজ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করছে চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর, ঝিনাইদহ অত্র এলাকার মানুষ। নতুন স্টেশন ভবন নির্মাণ করার কারণে ১৬৪ বছরের পুরানো ঐতিহ্যবাহী এ স্টেশনটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। স্থান সংকুলনের কারণে সংরক্ষণ করার মত কোনো সুযোগ নেই ঐতিহ্যবাহী ঐতিহাসিক স্থাপনাটির।
চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনটি জেলার ঐতিহ্য বহন করতো। তবে আধুনিক দ্বিতল বিশিষ্ট স্টেশন নির্মাণ শেষ হলে যাত্রীদের সুযোগ-সুবিধা আরো বহু গুণে বাড়বে। সরকার বর্তমানে রেলখাতে ব্যাপক উন্নয়ন করছে। চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন দিয়ে আন্তঃনগর ও মেইল ট্রেন নিয়মিত চলাচল করছে।
টিএইচ